ক্রান্তিকাল নিউজ ডেস্কঃ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে অশালীন অভিযোগ ও ব্যক্তিগত আক্রমণের মাধ্যমে নরসিংদীতে তুমুল আলোচনায় এসেছেন আলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাময়িক বরখাস্তকৃত সহকারী শিক্ষিকা শারমিন রেজওয়ানা।
সবশেষ ১৭ মার্চ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক নির্বাহী কর্মকর্তার অর্ধনগ্ন ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দেন তিনি। পরবর্তীতে ১৯ মার্চ ওই কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী ফেসবুকে পাল্টা পোস্ট দিয়ে শারমিনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলেন।
পোস্টে তারা অভিযোগ করেন, "ঘরে শিক্ষিত ও গুণী স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও কেউ কিভাবে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়—এই অভিযোগ তুলে শারমিন আমাকে অফিসে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করে।" একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, ঘটনার স্থান সরকারি কার্যালয়, কলেজ, ব্যক্তিগত বাসভবন এমনকি বন্ধুর বাড়িও।
শারমিনের ওইসব পোস্টে ব্যবহার করা হয়েছে অশোভন শব্দ, কুরুচিপূর্ণ ভাষা এবং সরাসরি ব্যক্তি আক্রমণ। তিনি রাজনৈতিক নেতাসহ ডাক্তার, কলেজ শিক্ষক ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, প্রেমের ফাঁদ, বিয়ের প্রস্তাব ইত্যাদি অভিযোগ ছুঁড়ে দিয়েছেন।
এমনকি তিনি একটি ছক আকারে ফেসবুকে নয় জনের নাম ও ছবি প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করেন। তালিকার শেষ নামটি একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবকের, যার বিরুদ্ধে প্রথমে ধর্ষণের অভিযোগ করে পরে তাকে চতুর্থ স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে চান বলেও জানান।
শারমিন তার এক পোস্টে দাবি করেন, নরসিংদী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথিত একটি ফোনালাপ ভাইরাল হয়েছে তার হাত ধরেই। সেই ফোনালাপে পৌরসভার সাবেক মেয়রের নামও জড়িয়ে দেন তিনি। এছাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার ছবিসহ গুরুতর অভিযোগ তোলেন সামাজিক মাধ্যমে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাওয়া হলে অভিযুক্তদের বেশিরভাগই সামাজিক সম্মানের ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।
বিশেষ করে আজিজ বোর্ডিংয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে- সেটি ২৬ বছর আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন এর মালিকের ছেলে আমির হোসেন আমু।
তাহলে অভিযোগের সময় অনুযায়ী ভিকটিম হিসেবে তার বয়স কত ছিল? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সচেতন নাগরিকদের মাঝে।
স্থানীয়রা বলছেন, এমন লাগামহীন আচরণ শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতিই নয়, সমাজে বিভ্রান্তি ও সুনাম ক্ষুণ্নের জন্ম দিচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিক উদ্দিন আহমদ বলেন, “নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই শারমিনকে চিনি। সে বরাবরই উশৃঙ্খল আচরণ করত। বহু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, রাজনীতিবিদ এমনকি শিক্ষককেও সে বিপাকে ফেলেছে।”
তিনি জানান, এক সময় শারমিনের এক প্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। তবে ব্যক্তিগত অনৈতিক আচরণ ও রুঢ় মানসিকতার কারণে সেই সম্পর্কও টেকেনি।
সূত্র বলছে, তার পরিবার—মা, বোন ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা পর্যন্ত তার কার্যকলাপে অতিষ্ঠ হয়ে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। বহুবার তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও তিনি কর্ণপাত করেননি।
নরসিংদীতে সামাজিক মাধ্যমে শারমিন রেজওয়ানার কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে তীব্র আলোড়ন। সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসন পর্যন্ত সবাই বিষয়টিকে দেখছেন গভীর উদ্বেগের সঙ্গে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, “একজন শিক্ষকের এমন অসংযত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বেপরোয়া আচরণ শিক্ষাক্ষেত্রে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। এ বিষয়ে দ্রুত তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে উঠেছে।”