ক্রান্তিকাল নিউজ ডেস্ক: নরসিংদীর পলাশ থানা এলাকায় একের পর এক অটোরিকশাচালককে নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনিয়ে নেওয়া ভয়ংকর এক চক্রের মূল হোতা ‘কসাই ইসমাইল’সহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় উদ্ধার করা হয়েছে নিহতদের ছিনতাইকৃত অটোরিকশা, মোবাইলফোন, নগদ টাকা এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র।
ঘটনার সূত্রপাত ১৪ জুন ২০২৫, দুপুর ১টার দিকে। গজারিয়া এলাকার অটোরিকশা চালক দেলোয়ার (৩০) নিজ বাড়ি থেকে অটো নিয়ে বের হয়ে আর ফেরেননি। পরদিন সকালে পলাশ থানার ধনাইরচর এলাকায় কলাবাগানের পাশে পাওয়া যায় তার গলাকাটা ও অঙ্গচ্ছিন্ন মরদেহ। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিল ধারালো অস্ত্রের ভয়ঙ্কর আঘাত, মৃতদেহটি ছিল উলঙ্গ অবস্থায়।
আরও পেছনে ফিরলে দেখা যায়, গত ১ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে একই কায়দায় অটোরিকশাচালক ইউনুস অপু-কেও হত্যা করে কলাবাগানে ফেলে রাখা হয়েছিল। দুই ঘটনার ধরন ও পদ্ধতিগত মিল থেকে পুলিশ নিশ্চিত হয়— এটি একটি সুসংগঠিত ছিনতাই চক্রের কাজ।
নিহত দেলোয়ারের স্ত্রীর করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পলাশ থানা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে ১৬ জুন দিবাগত রাতে গ্রেপ্তার করে: ১. মোঃ ইসমাইল মৃধা ওরফে কসাই ইসমাইল (২৫) — পেশায় কসাই ও অটোরিকশা চালক। ২. শাকিল (২৯) — পেশায় কসাই। ৩. মোঃ কবির হোসেন ওরফে ইঞ্জিনিয়ার কবির (৫৪) — পেশায় অটোরিকশা মেকানিক।তাদের বাড়ি পলাশ ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে—
তারা যাত্রীবেশে অটোতে উঠে চালকদের নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে জবাই করে হত্যা করে। এরপর লাশ কলাবাগানে ফেলে রেখে অটোরিকশা ও মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যেত।
উদ্ধার করা হয়েছে: ছিনতাইকৃত অটোরিকশা ১টি, নিহতদের মোবাইলফোন ২টি, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ৩টি ছুরি ও ২টি চাপাতি এবং ভিকটিমের পকেটে থাকা নগদ টাকা (৫৮০ টাকা)।
অভিযান ও তদন্তে নেতৃত্ব দেন:
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল:মোঃ আনোয়ার হোসেন, বিপিএম, অফিসার ইনচার্জ, পলাশ থানা: মোঃ মনির হোসেন, তদন্ত কর্মকর্তা: এসআই মোঃ কামরুল ইসলাম, ও সহযোগিতা করেন: এসআই শেখ মোঃ জসিম উদ্দিন (ডিবি)।
এদিকে পুলিশ বলছে: “এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে অটোচালকদের টার্গেট করে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। তাদের গ্রেপ্তার একটি বড় সাফল্য। আমরা আরও তদন্ত করে চক্রের বাকি সদস্যদের ধরতে কাজ করছি।”
একাধিক হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন এবং মূল ঘাতকদের গ্রেপ্তারে পুলিশ বাহিনীকে সাধুবাদ জানাচ্ছে স্থানীয় জনতা। এমন অপরাধ চক্রের চূড়ান্ত বিচার দাবিও উঠেছে সর্বমহল থেকে।